ছাত্রনেতারা রাজনৈতিক ঐকমত্যের জন্য সচেষ্ট
পদত্যাগের পরপরই সংশয়ে বিএনপি।
কোনো ব্যবস্থা না নিলে সরকারের সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন ছাত্রনেতারা।
স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন অ্যান্ড ন্যাশনাল সিটিজেনস কমিটি (জাতীয় নাগরিক প্ল্যাটফর্ম) সভাপতি মোঃ শাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে ঐক্যমতে পৌঁছাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন দুই মঞ্চের নেতারা।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতা ও নাগরিক কমিটি তাদের দাবিতে অটল থাকতে চায় এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে সংগঠনটির নেতারা দুটি গ্রুপ গঠন করেছেন। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা চলছে।
বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসেন তারা। ওই দিন দুই সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বাসায় যান। পরে বৈঠকে যোগ দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনও আনুষ্ঠানিক নথি নেই দাবি করে রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যের পরে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির এমন পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের পরও কোনো ব্যবস্থা না নিলে সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তাই তারা এখন আলোচনার মাধ্যমে দাবির সমর্থনে রাজনৈতিক দলগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করছে।
ওই বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, সভাপতি মো: শাহাবুদ্দিনের প্রতি তাদের দলের কোনো সহানুভূতি নেই। যাইহোক, তারা রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টা এবং তার পদত্যাগের পিছনে অন্য কোনও অপ্রীতিকর উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা সহ বেশ কয়েকটি কারণ সন্দেহ করে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ: রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে সমাধান চায় সরকার
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ: রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে সমাধান চায় সরকার
এর আগে, ২৩ অক্টোবর, সালাহউদ্দিন আহমেদ সহ বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করেন এবং রাষ্ট্রপতির আকস্মিক অপসারণের কারণে সম্ভাব্য সাংবিধানিক সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
বিএনপি বলছে, এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে, যা তারা চায় না।
বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির দুই নেতা এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। ছাত্রনেতাদের বার্তা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ারও আশ্বাস দেন তারা।
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সাংবিধানিক বিষয় নয়:
23 অক্টোবর 2024
স্টুডেন্ট অ্যাগেইন ডিসক্রিমিনেশনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আকতার হোসেন, মুখপাত্র সামন্ত শারমিন ও জুলি শহীদ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন ড.
জামায়াত নীতিগতভাবে একমত
শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বৈঠক করেন। রাজধানীর মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও হামিদুর রহমান আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি রাষ্ট্র বা সাংবিধানিক সংকট চায় না: সালাহউদ্দিন
23 অক্টোবর 2024
বিএনপি রাষ্ট্র বা সাংবিধানিক সংকট চায় না: সালাহউদ্দিন
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবির সঙ্গে জামায়াত নেতারা নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। তবে তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর জোর দিয়েছে দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র নেতারা জামায়াত নেতাদের বলেছেন, তারা আরও আলোচনার মাধ্যমে দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে চান এবং পরে একটি পদক্ষেপ চূড়ান্ত করতে চান।
আমরা যা বুঝি তা হলো, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব।
আরিফ সোহেল, সদস্য সচিব, ছাত্র-ছাত্রী বৈষম্যের বিরুদ্ধে
সারজিস আলম ছাড়া বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা হওয়া সব ছাত্রনেতারা শুক্রবার জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে আমাদের দাবি পূরণের আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা রাজনৈতিক ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর আমরা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেব।”
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে স্টুডেন্টস অ্যাগেইন ডিসক্রিমিনেশন।
পরদিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাষ্ট্রপতিকে কেন্দ্র করে দেশে কোনো রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তারা চায় না।
সাংবিধানিক সংকটের বিরুদ্ধে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি
23 অক্টোবর 2024
সাংবিধানিক সংকটের বিরুদ্ধে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি
তবে বিএনপির অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নন দুই ছাত্রদলের নেতারা। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টি উঠে আসে।
একজন উপদেষ্টা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকটের বিপক্ষে নয়। ছাত্র নেতৃত্বও তাদের দাবিতে অনড় এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা আরও জটিলতা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে সরকার। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাউন্সিল।