নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা নানা কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলেছে। কোনো দ্রব্যের দাম বাড়লে সহজে কমে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। নিঃসন্দেহে, দরিদ্ররা স্বল্প আয়ে টিকে থাকতে পারে না। বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এসব দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের উচিত তাদের সাহায্য করা।
টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি বাড়াতে হবে। তবে, এই সংকট শীঘ্রই দূর হবে বলে মনে হচ্ছে না। বাংলাদেশে ডলার সংকটের কারণে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সুদের হার, পণ্য আমদানি-রপ্তানি, রাজস্ব কোনো সূচকেই সন্তোষজনক অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। এছাড়া মুদ্রাবাজারে চরম অস্থিরতা রয়েছে। অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে খোলা বাজারে ডলারের দাম বাড়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। নানা কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা কৌশল গ্রহণ করেছে। কিন্তু দ্রুত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা কঠিন। ব্যাংকিং খাতে সুদের হার বৃদ্ধির সঙ্গে শেয়ার বাজার জড়িত। এই মুহূর্তে শেয়ারবাজার নিম্নমুখী এবং লেনদেন ভালো যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারের অবস্থা তুলনামূলক ভালো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি বেশ নাজুক। দেশের পুঁজিবাজার মূল্য হারিয়েছে। মূল্যস্ফীতি ক্রমশ বাড়ছে। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। আগামী দিনে খুব একটা ভালো হবে বলে আশা করা যায় না। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
নিরীহ মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে মূল্যবান সম্পদ। আমদানি-রপ্তানি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারল্য সংকটের কারণে দেশের অধিকাংশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ ঋণ নেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি রেকর্ড। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। দেশ থেকে নানাভাবে বিদেশে পাচার হয়েছে প্রচুর অর্থ।
দেশের প্রতি আস্থা না থাকায় এবং নিরাপত্তার শঙ্কায় মানুষ এসব মুদ্রা বিদেশে পাচার করে। ধনীরা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিদেশে টাকা পাচার করে। বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন কর্মকর্তারা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। তারা দেশ থেকে প্রচুর অর্থ লুট করে বাইরে পাচার করেছে। এভাবে বিপুল পরিমাণ শেয়ারবাজার পুঁজি নষ্ট হয়েছে। অতীতের মতো এবারও ব্যবসায়ীদের নামে অপরাধীরা শেয়ারবাজার থেকে টাকা চুরি করেছে। দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকে লেনদেন করা লোকের সংখ্যাও কমেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা পোশাক শিল্পেও দেখা গেছে নৈরাজ্য। কিছু সুবিধাবাদী অস্বস্তিকর কাজে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে। একের পর এক পণ্যের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এমন সংকট সৃষ্টি করেছে যা অতীতে কখনো মোকাবেলা করা হয়নি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের ওপর। বাইরে থেকে এ ধরনের সংকট এলে আমরা তা বন্ধ করতে পারব না। এটি অর্থ সাশ্রয় করে
সংকট আরও গভীর হয়েছে। তাই দেশের স্বার্থে, শিল্পের স্বার্থে সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
কিছু স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের ব্যাংক বা অন্য কোনো খাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে কাঠামোগত সংকট সৃষ্টি না হয় এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে হচ্ছে। কিছু