রাজস্ব সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি অর্থনৈতিক উদ্বেগ বাড়ায়
সব খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে, কাস্টমস, আবগারি ও আয়কর—তিনটি খাতের কোনোটিতেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
কর আদায় বাড়ালে এই চাপ কমবে: ড. ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
প্রকাশিত: 24 অক্টোবর 2024, 09:58
রাজস্ব সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি অর্থনৈতিক উদ্বেগ বাড়ায়
সরকার বেশি খরচ করছে। তার থেকে কম আয় করেন। রাজস্ব বাড়াতে প্রতি বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়। সেক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া হয় না; এ কারণে রাজস্ব আদায় সে হারে বাড়ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার পতনশীল সরকারের সমন্বয়হীন বাজেট পরিকল্পনার চাপে রয়েছে। কোষাগারে এখন বিপুল নগদ সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় প্রতি মাসেই ঘাটতির ব্যবধান বাড়ছে; যা এখন ভবিষ্যৎ ব্যয়ের জন্য উদ্বেগের প্রধান কারণ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক বা তিন মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এ অবস্থায় সরকারকে ব্যয়কে প্রাধান্য দিয়ে পথ বেছে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হবে। প্রিন্সিপালের সামর্থ্য না পাওয়ার পাশাপাশি, তারা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার করতে থাকে এবং দাতাদের কাছে আরও ঘুরতে হয়।
অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে, স্থিতিশীল রাজনীতি ও অর্থনীতি বজায় থাকলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পায়। দুজনই বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭০ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৫ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। এভাবে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এনবিআরের সক্ষমতার চেয়ে বেশি টার্গেট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই-আগস্টের আগের আন্দোলন অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল। তারপরও ফিরে তাকাতে পারেননি উদ্যোক্তা। সাধারণভাবে রাজস্ব আদায়ের চাপ থাকে। কর আদায় বাড়াতে পারলেই এই চাপ কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এ জন্য কর ফাঁকিদাতাদের চিহ্নিত করা, অর্থ পাচার রোধ, নতুন সংগ্রহের খাত অন্তর্ভুক্ত করা এবং এই প্রক্রিয়ায় অটোমেশন বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। ফাহমিদা খাতুন এনবিআর সংস্কারেরও পরামর্শ দেন।
জুলাই মাসে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা 25,569 কোটি টাকা। সংগ্রহ হয়েছে ২০ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। প্রথম মাসে ঘাটতি ছিল ৫,০০০,২৯৯ কোটি টাকা। আগস্টে ৩১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি প্রায় ৯ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯ হাজার ৩২৪ মিলিয়ন টাকা। সংগ্রহ হয়েছে ২৯ হাজার ২ কোটি টাকা। ঘাটতি কোণ ১০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।
সব খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি: আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং আয়কর—এই তিনটি খাতের কোনোটিই জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। তিন খাতেই আগের বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় কমেছে। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি আয়কর খাতে। তিন মাসের মধ্যে ঘাটতি ছিল ১০.৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এ খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ৬৮১ মিলিয়ন। সংগ্রহ হয়েছে ২৩ লাখ ১৬৪ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ কোটি কম।
আমদানি খাতে তিন মাসে ২৮ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দেড় কোটি টাকা কম।
আর ভ্যাট বা মুসাক আদায়ে ঘাটতি রয়েছে ৮ হাজার ৫৮৮ মিলিয়ন টাকা। ভ্যাট আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা কম।
চলতি অর্থবছরে এনবিআর কর ও শুল্ক বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, অর্থাৎ। রাজস্ব সংগ্রহ। বছরের শেষ নাগাদ কর আদায়ে গতি আসবে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।