অর্থনীতি রাষ্ট্র ও রাজনীতির পরিপূরক। দেশ গঠনে রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কার করতে হলে আগে অর্থনীতি সংস্কার করতে হবে। অর্থনীতির সংস্কার ছাড়া এগোনো সম্ভব নয়।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) বিআইএসএস-এ “গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের উপর সংলাপ” আয়োজন করছে; ‘অর্থনৈতিক নীতি প্রসঙ্গ’ সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সংলাপে বক্তারা বলেন, আমাদের পরিসংখ্যানের ভিত্তি মিথ্যা। সেখান থেকে বের হতে হবে। পরিসংখ্যান সংশোধন করা প্রয়োজন. অর্থনৈতিক কাঠামো স্বয়ংক্রিয় হতে হবে। রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। আয়করের পরিধি বাড়াতে হবে। আর অবশ্যই রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া এগুলো সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করতে পারলে মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করতে পারব।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারপারসন মুনিরা খান বলেন, যেহেতু হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে, তাই আমাদের এখানে সংস্কার আনতে হবে। এখনও যানজট চলছে। মিডিয়া ও ব্যাংক যখন বলে ১০টি ব্যাংক দুর্বল তখন ওই ব্যাংক থেকে লোকজন টাকা তুলে নেবে। সে টাকা বাড়িতে লুকিয়ে রাখবে নয়তো দেশের বাইরে পাচার করবে।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিলুর রহমান বলেন, আস্থার সংকট বিগত সরকারের সময়েও ছিল এবং এখনো আছে। আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। এসব আলোচনার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিশ্চিত না হলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না। আবার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে রাজনৈতিক সংকট কাটবে না।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দুটি জিনিস আমাদের পুরোপুরি মেরে ফেলছে- একটি ব্যাংকের সুশাসন, অন্যটি জ্বালানি খাত। আমাদের নীতিতে অবশ্যই যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরা নীতি তৈরি করি যখন সংশ্লিষ্ট দলগুলো সম্পর্কহীন থাকে। ফলে এই নীতি বাস্তবসম্মত নয়। চলছে না।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, আমরা কেউই এখন স্বস্তিতে নেই। আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। শিল্পগুলো গ্যাস পাচ্ছে না। শিল্প-কারখানা সুরক্ষিত নয়। আমরা কার সাথে কথা বলব? এমন অনিশ্চয়তা থাকলে কেউ ভালো থাকবে না।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সবুর খান বলেন, পরিসংখ্যানই উন্নয়নের চাবিকাঠি। আমি চাই দেশের সব পরিসংখ্যান সত্য হোক। আমাদের প্রধান সমস্যা পরিসংখ্যান। আমরা ব্যাংক থেকে ঋণ দিই, কিন্তু আমরা যাকে ঋণ দিচ্ছি তার ট্যাক্স ফাইলে সম্পদ আছে কিনা তা আমরা দেখি না। বিশ্বের প্রত্যেকেরই ক্রেডিট স্কোর আছে, কিন্তু আমাদের নেই।
যারা ভালো কথা বলে তাদের দরকার নেই। তিনি আরও বলেন, কথা না বলে কাজ করতে পারে এমন লোক দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিল্পায়ন হচ্ছে না। আমাদের প্রধান কাজ অনানুষ্ঠানিক খাতে। আমরা আনুষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ পাই না। আমরা অধ্যাপক ইউনূসের ছবি দেখিয়ে কোনো কাজ করছি না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. আবু ইউসুফ বলেন, আমাদের জিডিপি এবং জনসংখ্যার পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক বড় প্রশ্ন রয়েছে। প্রথমে আমাদের ডেটা সংশোধন করতে হবে। তারপরে আমরা পরিমাপ করতে পারি কত খাবারের প্রয়োজন হবে। এজন্য আমাদের তথ্য স্থান ঠিক করতে হবে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা না থাকলে মূল্যস্ফীতিসহ পণ্যের সামগ্রিক মূল্যের ওপর প্রভাব পড়বে। আমরা দেখি রাজনীতিবিদরা আমলা হয়েছেন আর আমলারা রাজনীতিবিদ হয়েছেন। সেখান থেকে বের হতে হবে। আমাদের এখানে ট্যারিফ কমিশন আছে, কিন্তু তারা কোনো কিছুর দাম নির্ধারণ করে না, সেখানেও সংস্কার করতে হবে।
বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বলেন, বাজার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সমবায় সমিতি চালু করা যায় কি না তা ভাবা উচিত। জাপানের মতো শিল্পোন্নত দেশে এখনও সমবায় রয়েছে। ঘুষ নেওয়া হয়েছে ডলারে। এটি ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ করা হয়। অনেকের বাড়িতে কোটি কোটি টাকা আছে, সেগুলো ব্যাংকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, সরকারি সহায়তার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক তাদের ঋণ দিতে চায় না, তারপরও আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় যাতে তারা ঋণ পায়।
তার মতে, কর্মসংস্থানের দিক থেকে স্বল্পশিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত যুবকদের জন্য এখনো আমাদের কাছে কোনো নির্দিষ্ট রোডম্যাপ নেই। উচ্চশিক্ষিত বেকারদের সঙ্গে শিল্পের সংযোগ গড়ে তুলতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করে তাদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করতে পারি।
বাংলাদেশে ইউএনডিপির প্রাক্তন আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা বলেন, শুধু উপজাতিদের ক্ষেত্রে বৈষম্য নয়, তাদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক বৈষম্য থাকা উচিত। তাদের অবশ্যই প্রতিরক্ষামূলক কভারের নীচে রাখা উচিত