আবদুল আউয়াল মিন্টু দেশের একজন সুপরিচিত ব্যবসায়ী। এটাই তার পরিচয়। আরেকটি পরিচয়- তিনি একজন রাজনীতিবিদ ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতি সবকিছুই শাসন করে। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতিও। তিনি লাল তির বীজ, নর্থ সাউথ সিড, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। তিনি প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আবদুল আউয়াল মিন্টু দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে কালের আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এস এম আলমগীর
সময়ের আলো: কেমন আছেন?
আব্দুল আউয়াল মিন্টু: আমার শরীর ভালো আছে কি না জানতে চাইলে বলবো- আমি আমার বয়সের দিক থেকে অনেক ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। এবং যদি আপনি জানতে চান যে আমি একজন উদ্যোক্তা হিসাবে অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা এবং দেশের ব্যবসার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেমন আছি, যা আমি সর্বদা মোকাবেলা করি, আমি বলব যে আমি বা আমরা কেউই করছি না। ভাল কারণ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বল, বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কেউ ভালোভাবে বাঁচতে পারে না। আমরা ব্যবসায়ীরা যেমন ভালো নই, তেমনি দেশের সাধারণ নাগরিকরাও তেমন ভালো নই। আর বর্তমান এই খারাপ অবস্থার দায় টানা তিন মেয়াদে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট।
সময়ের আলো: দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান ঘটে ৫ আগস্ট। এই দীর্ঘ সময়ে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও ব্যবসার কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদরা কখনো কিছু বলেন না, রাজনীতিবিদরা কখনো বলেন না। মোদ্দা কথা হল সমাজের দুটি দিক আছে, একটি রাজনৈতিক, অন্যটি অর্থনৈতিক। আলাদা করে দেখলে ভুল হবে। রাজনীতি ও অর্থনীতি একসাথে চলে। কিন্তু আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদরা কখনোই এভাবে চিন্তা করেন না এবং কথা বলেন না। একজন যদি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সুস্থ হয়, তবে অন্যটিও ভালো হতে পারে। তাদের একটি খারাপ হলে অন্যটি খারাপ হবে। এটাই নিয়ম, অন্য কোনো বিকল্প নেই। শুধু তাই নয়, অর্থনীতিও নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতি। যদি এই নিয়মের মাধ্যমে অর্থনীতি সুষ্ঠু হয়, তাহলে এই সুষ্ঠু অর্থনীতিই রাজনীতিকে পরিশীলিত করে তোলে। এই দুটির একটি খারাপ হলে অন্যটি অবশ্যই খারাপ। এখন প্রশ্ন উঠেছে- কেন এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়? প্রথমত, আমি যদি রাজনীতির কথা বলি, তাহলে আমাকে বলতেই হবে যে, বাংলাদেশে একটা দুর্নীতিবাজ রাজনীতি আছে। আমাদের দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এরশাদ সাহেবের আমলের কথা যদি বলি, তখন অনেকেই এরশাদ সাহেবের কাছ থেকে মনোনয়ন নিয়েছিলেন। যারা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে তারা নির্বাচনের খরচ বাবদ আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়। তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেন্দ্র দখল ও ভোট চুরির জন্য লোক নিয়োগ করেছেন। ব্যবসায়ীরা এভাবে টাকা দিয়ে ভাবলেন এমপি আমার টাকা নিয়ে, গুণ্ডাদের ভাড়া করে, আমার টাকা দিয়ে ভোট চুরি করে জয়ী হচ্ছেন, তাহলে আমার টাকা এমপিকে দেওয়ার কী দরকার। নিজের টাকায় কেন্দ্র দখল করতে পারতাম, নিজেরাই লোক কিনে নিতে পারতাম। তাহলে অন্য কাউকে বা টাকা দিয়ে রাজনীতিবিদকে এমপি বানানোর কি দরকার, নিজের টাকা খরচ করে এমপি হওয়া যায়। তাই একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দল, প্রচুর অর্থ নিয়ে এবং অবশেষে যখন অর্থ বেশি হয়, তারা গিয়ে রাজনীতি দখল করে। এভাবে এরশাদ সাহেবের শাসনামলে দলাদলির মাধ্যমে দেশের রাজনীতি কলুষিত হয়। এরশাদ আমলের রাজনৈতিক দুর্নীতি দূর করতে আমরা সবাই ১৯৯০ সালে আন্দোলন শুরু করি। সেই আন্দোলনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতসহ অন্যান্য দলও রয়েছে। ১৯৮৬ সালের শুরুর দিকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় রূপরেখা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ হঠাৎ করেই নির্বাচনে যায়। তারা সেই নির্বাচনে যাওয়ার কারণ ছিল তারা এত সমস্যায় ছিল। তখন আমরা একসঙ্গে অভিনয় করলেও আওয়ামী লীগ গোপনে এরশাদ সাহেবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনে যায়। তখন আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেছিলেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে। তাহলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।